কেমন হলো বদমাইশ পোলাপাইন

 

চিত্র : বদমাইশ পোলাপাইন পোস্টার

মানুষের জীবনের সবথেকে মজার এবং সবথেকে শিক্ষণীয় সময় হলো কলেজ জীবন। কারণ কলেজের শিক্ষায় মানুষের সারা জীবন পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। কলেজ এ শুধু মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে তা কিন্তু নয় বরং জীবন গঠনের প্রয়োজনীয় দিক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গঠনের উপযুক্ত সময়।বদমাইশ পোলাপাইন ধারাবাহিক নাটকটি দেখার পর থেকে কলেজ জীবনের সেই পুরোনো দিনগুলির কথা মনে পড়ে গেলো।তাই নিজের স্মৃতিচারণের ঘটনা থেকে কিছু কথা লিখছি।


★ধারাবাহিকটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রঃ

----------------------------------------------------


*হীরনের বাবাঃ মফস্বলের একজন টিপিক্যাল বাবা ফজলুর রহমান বাবু।যিনি মধ্যবিত্ত পরিবারকে রিপ্রেজেন্ট করেছেন। মা মরা সন্তানকে মানুষ করা তার কাছে মূখ্য বিষয়!


*মকবুল স্যারঃ এক্সটা প্রিন্সিপাল বললে ভুল হবে না।দেশে এমন কোনো স্কুল বা কলেজ পাওয়া যাবে না যেখানে মকবুল স্যারের মতো শিক্ষক নেই।🤣 তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে মারধর তো থাকছেই, এমনকি পরীক্ষায় নাম্বার ও কমিয়ে দেন।তবে এমন ও বদমাইশ পোলাপাইন থাকে যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে টাকা মেরে দেয়।


*হীরণঃ বি (বদমাইশ পোলাপাইন) কোম্পানির প্রেসিডেন্ট এবং ব্র‍্যান্ড এম্বাসেডর। তার পাওয়ার খাঙ্গারি ভাই। গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে ট্যালেন্টেড।তবে সেটা পড়াশোনায় কাজে লাগায় না।সমস্ত বদমাইশি প্ল্যান তার মাথা থেকে আসে।খেলাধুলায় অলরাউন্ডার।মনে মনে মাহিমাকে সে পছন্দ করে।তার সার্কেল তার কথামতো চলে।


*সায়েন্সের ম্যাডামঃ খুব সম্ভবত জীববিজ্ঞানের শিক্ষক।কলেজের ছাত্র শিক্ষক সকলের ক্রাশ।মকবুল স্যার তার প্রেমে হাবুডুবু খান।পোলাপান মকবুল স্যারের মার থেকে রক্ষা পেতে ম্যাডামকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।কারো ক্লাসে স্টুডেন্ট থাকুক আর না থাকুক উনার ক্লাসে থাকবেই।বাস্তবে এমন ম্যামের ক্লাস অন্যান্য গ্রুপের ছাত্ররা এসে করে যায়।


*মাহিমাঃ কলেজের সবথেকে ভদ্র, কিউট, অন্যতম ভালো স্টুডেন্ট।সবার ক্রাশ।কিন্তু সে মনে মনে প্রত্যয়কে পছন্দ করে।পোলাপাইন প্রত্যয়ের ভয়ে তাকে ডিস্টার্ব করে না।যারা জানে না তারা প্রত্যয়ের হাতে মার খায়।


*খাঙ্গারি ভাইঃ এলাকার বড় ভাই।পলিটিকালি পাওয়ারফুল।কিন্তু সে মানুষকে খাঙ্গারি দিতে পারে না।বদমাইশ পোলাপাইন উল্টা তাকে খাঙ্গারি দিয়ে টাকা নিয়ে যায়।মাহিমা তার ক্রাশ।মূলত মাহিমার কথা বলে পোলাপাইন তার কাছ থেকে টাকা হাতায়।


*রায়হানঃ বদমাইশ পোলাপাইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। তবে তার একটা বদ অভ্যাস আছে।প্রচুর ঘুম পছন্দ করে।তাকে ঘুমবাবু বললে ভুল হবে না।প্রত্যয়ের ডান হাত। তার সার্কেলের সকল সমস্যা সে সমাধান করে।যেকোনো প্রয়োজনে যে কারো পায়ে পড়তে পারে।তার সমাধানের অস্ত্র চুমু খাওয়া।সে খুবই বিনয়ী।


*ঘাউড়াঃ তার ব্রেইন একটু কম।দূর্দান্ত সাহসী।ভালো ব্যাটিং করে।শরীরে আবার প্রচুর শক্তি! কোথায় কি বলতে হবে জানে না।তার কাছে সবকিছুর সমাধান মারামারি।এলাকার ছোটোভাই থেকে শুরু করে প্রিন্সিপাল সবার সাথে ঘাউড়ামি করে সে জনপ্রিয়।এজন্য সবথেকে বেশি মার তাকে খেতে হয়।


*মন্টু বিড়িঃ ক্লাসের সবথেকে মেধাবী ছাত্র।অনেক পড়াশোনা করে।কিন্তু তার ও দুষ্টামি করতে মন চায়। তাই সে বদমাইশ পোলাপাইনের সাথে মেশে।তবে ভয়ের কারণে অনেক সময় প্যাচ লাগিয়ে দেয়।যার কারণে বিপদে পড়তে হয় বদমাইশ পোলাপাইনদের।পানিশমেন্ট হিসেবে সে বিনসন (বেনসন)সিগারেট খাওয়ায়।বদমাইশ পোলাপাইনদের শিক্ষা বিষয়ক সকল কার্যক্রমে সে সাহায্য করে।


*নীহালঃ মকবুল স্যারের চামচা। বদমাইশ পোলাপাইনের যাবতীয় কাজের রিপোর্ট মকবুল স্যারের কাছে দেওয়া তার কাজ। সে সম্ভবত মাহিমাকে পছন্দ করে।কিন্তু তার পলিটিকাল পাওয়ার নেই।তাই সে বদমাইশ পোলাপাইনের মার নীরবে সহ্য করলেও শিক্ষকদের কাছে বিচার দেয় না।


*তানভীর নীলয়ঃ খাঙ্গারির এসিস্টেন্ট। খুব সম্ভবত স্কুল ড্রপট।খাঙ্গারি এবং প্রত্যয়ের যতো গোপন ডিল হয় সব প্রত্যয়ের বন্ধুদের কাছে লিক করে।


*সামিউলঃ বদমাইশ পোলাপাইন গ্রুপের সদস্য।খুব সম্ভবত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।তার চরিত্র এখোনো সামনে আসেনি।সম্ভবত তার ক্যারেক্টার আগামীতে সামনে নিয়ে আসা হবে।


কোনো ক্যারেক্টার এখোনো ১০০% প্রকাশ পায় নি।আমার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে মিল রেখে আমি লিখেছি।প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার খুবই ইন্টারেস্টিং।


★অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের নিয়ে কিছু কথাঃ

------------------------------------------------------------------


*ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা বলতে চাই না।তাকে বাংলা নাটকের জীবন্ত কিংবদন্তী বললে আশাকরি ভুল হবে না।নিজের চরিত্রের পাশাপাশি তরুণদের যেভাবে গাইড করেছেন সত্যি বলতে খুবই ভালো লেগেছে।


*মারজুক রাসেল একটা সময় নিজেকে হারাতে বসেছিলেন কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আবার নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেছেন।শিক্ষক চরিত্রে খুব সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।মনে হলো ৫-৬ বছর আগের সেই পুরোনো মারজুকের অভিনয় দেখছি।❤️


*প্রত্যয় হিরণের এক্টিংয়ে উন্নতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।আগের থেকে তার অনেক উন্নতি হয়েছে। সুযোগ পেলে হয়তো নিজেকে আরো বের করে আনবে প্রত্যয়।ফজলুর রহমান বাবুর হাতে কলমে শিক্ষা হয়তো তাকে আগামীতে আরো ভালো অভিনেতা হতে সাহায্য করবে।যার প্রতিচ্ছবি অলরেডি দেখা যাচ্ছে।


*মুক্তি সালাউদ্দিন লাভলুর হাত ধরে তার নাটকে পদযাত্রা শুরু হলেও মাঝখানে ছিলেন অনিয়মিত।আমি বিয়ে করবোনা নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি আবার নিয়মিত হয়েছেন।মুক্তির এ্যাক্টিং এবং এক্সপ্রেশন বরাবরের মতোই ঈর্ষনীয়।


*মাহিমা এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে সম্ভাবনাময় একটা নাম।বয়সের তুলনায় তার অভিনয় অনেক বেশি ম্যাচিউরড।এক্সপ্রেশন ও ভালো দেয়।আশাকরি সামনে নিজেকে আরো ছাড়িয়ে যাবে।


*তাঞ্জিম হাসান অনিক খাঙ্গারি চরিত্রে যেভাবে অভিনয় করেছেন, খুব সম্ভবত সে ছাড়া আর অন্য কেউ এভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতোনা। তার এক্টিং খুবই ভালো লেগেছে।


*দ্যা আজাইরা লিমিটেড এর ভিডিও দেখা থেকে রায়হান খান ছেলেটাকে চেনা। ওর আচরণ এবং এক্টিং অনেকটা পরিণত।সুযোগ পেলে ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।


*রাশেদ আরমান ২০১৯ সালে ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে ছেলেটা উঠে এসেছে। সত্যি বলতে তার এক্টিংয়ের আমি একজন বড় ফ্যান।ঘাউড়া চরিত্রে যেভাবে নিজেকে তুলে ধরেছে এক কথায় অসাধারণ।


*প্রত্যেক স্কুল/কলেজে এমন একজন স্টুডেন্ট থাকে যে সাধারণত আঁতেল হয় এবং শিক্ষকের কথায় উঠাবসা করে।নাটকে আহসান হাবীব নীলয়ের চরিত্রটা এর ব্যতিক্রম নয়।


*নোয়াখালী ভাষা ভালোই আয়ত্ব করেছে নীহাল ছেলেটা।নাটকে শিক্ষকের সাথে বরাবরই সে ভালো সম্পর্ক মেইনটেইন করে ছেলে।অনেকেটা তেলবাজ স্টুডেন্টের মতো!😅


*তানভীর নীলয়ের যতোটুকু অভিনয় দেখেছি খারাপ না।বিশেষকরে প্রত্যয় আর রাশেদকে যেভাবে ধমক দিয়েছে হাসি আটকে রাখা যাচ্ছিলোনা।


*সামিউল আলম গুড লুকিং অবশ্যই।তার অভিনয় এখোনো ওইভাবে দেখা হয়নি।তবে সাপোর্টিভ ক্যারেক্টারের জন্য ভালোই মনে হচ্ছে।


★ ব্যক্তিগত কিছু কথাঃ

-----------------------------


আমি আমার জীবনের সবথেকে মজার সময় কাটিয়েছি আমার কলেজ জীবনে। স্কুলের পথ চুকিয়ে যখন কলেজ জীবনে পদার্পন করলাম তখন অনেকটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আজ ও কলেজের প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে। কারণ খুবই অপরিচিত এবং একটি ভিন্ন পরিবেশ ছিল আমার কলেজের। প্রথম প্রথম নিজেকে খুব একা মনে হতো কারণ আমার বন্ধু বান্ধব ছিলোনা।কিন্তু আস্তে আস্তে পরিবেশ পাল্টাতে লাগলো। নতুন নতুন বন্ধু বান্ধব হলো। সকলে মিলে কলেজের বাকি সময়টা আনন্দের সাথে কাটিয়েছি।কখোনো ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি, আবার কখোনো পড়া না পারার অপরাধে শিক্ষকের ধমক শুনেছি। হাসি,কান্না,পড়ালেখা সব মিলিয়ে আমাদের প্রতিটা দিন ভালোই কাটছিলো। কিন্তু কলেজ নামের গন্ডিটার একটা সময় ইতি টানতে হয়।আমার জীবনটা এর ব্যতিক্রম ছিলো না।জীবন যুদ্ধে আজ সেই বন্ধুদের থেকে আমি অনেক দূরে।😔


টিনেজারদের ক্যারেক্টারে সাধারণত ২৮-৩০ বছর বয়সের অভিনেতা অভিনেত্রীদের দেখা যায়।কিন্তু বান্নাহ ভাই রিস্ক নিয়ে টিনেজারদের গল্পে টিনেজ এবং তাদের কাছাকাছি বয়সের অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের সিলেক্ট করেছেন যা সত্যি প্রশংসনীয়।নাটকের ট্রেইলার খুবই চমৎকার হয়েছে।কিছুদিনের মধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করে ফেলবে। ইতোমধ্যে নাটকটির প্রথম পর্ব মাত্র ৩ দিনে ১ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করেছে।দ্বিতীয় পর্ব তিন দিনে ১ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করবে।নাটকের দুটি গান রিলিজ হয়েছে।দুটি গানই চমৎকার হয়েছে।আরেকটি গান হয়তো খুব দ্রুত রিলিজ পাবে।তার অপেক্ষায় থাকলাম।


রেটিংঃ ❤️


★ মূল কারিগরদের নিয়ে কিছু কথাঃ

-----------------------------------------------


নিজের মেকিং এবং অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে পুরো বিষয়টি দারুণ ভাবে রিপ্রেজেন্ট করেছেন সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ।তরুণ অভিনেতাদের সাথে সিনিয়র অভিনেতাদের মেলা বন্ধন যেভাবে করিয়েছেন সত্যি বলতে অবাক করার মতো বিষয়!বান্নাহর চিন্তাভাবনা এবং মেকিং সেন্স প্রমাণ করে ভালো গল্প পেলে নিজেকে আরো ছাড়িয়ে যাবেন! এমনিতেই তরুণ অভিনেতা অভিনেত্রীদের ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে মাবরুর রশীদ বান্নাহ বরাবরের মতো অনন্য। তার নাইন এ্যান্ড আ হাফের পর বদমাইশ পোলাপাইন একটা ভালো সংযোজন বলতে হবে।গল্প ও দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। আশাকরা যায় আগামীতে তার হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে বড় রকমের একটা পজেটিভ চেইঞ্জ আসবে।


পুরো গল্পটি আমাদের সামনে নিয়ে আসার পেছনে মোসাব্বের হোসেন মুয়ীদের অবদান সত্যি প্রশংসা পাবার দাবিদার।"ব্যঞ্জনবর্ণ" এর মতো একটা মাস্টারপিস গল্পের পর এমন গল্প প্রমাণ করে আগামীতে আরো ভালো কোনো গল্প নিয়ে আমাদের সামনে আসবেন মুয়ীদ।


ক্যামেরার পেছনে নিজেদের কাজের দক্ষতা দেখিয়েছেন তানভীর আঞ্জুম এবং আশিক আমান।সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিওপি আঞ্জুম ভাইকে বললে ভুল হবেনা।


তাছাড়া এডিটের কাজে দ্যুতি ছড়িয়েছেন শামীম রহমান ভাই।কালার এবং গ্রেডিং এর কাজ খুবই চমৎকার হয়েছে।বরাবরের মতোই উনার কাজ আমাকে মোহিত করেছে।


বদমাইশ পোলাপাইন পুরো টিমের জন্য শুভকামনা থাকবে।আশাকরি দারুণ সব কাজ দিয়ে আমাদের মোহিত করবে পুরো টিম!❤️

Post a Comment

Previous Post Next Post